Search

Showing posts with label দ্বিজেন্দ্রলাল রায়. Show all posts
Showing posts with label দ্বিজেন্দ্রলাল রায়. Show all posts

নন্দলাল - দ্বিজেন্দ্রলাল রায়


নন্দলাল


নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ -
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, 'আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?'
নন্দ বলিল, 'বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?'
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।'

নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, 'যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা'
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক'
তখন সকলে বলিল- 'হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।'

নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে, পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ;
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল,
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।'

নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, 'আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি' বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।'
তখন সকলে বলিল – 'বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!'

নন্দ বাড়ির হ'ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে 'কলিসন' হয়;
হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল

সকলে বলিল- 'ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।'
নন্দলাল - দ্বিজেন্দ্রলাল রায়



“বঙ্গ আমার জননী আমার”

--দ্বিজেন্দ্রলাল রায়


বঙ্গ আমার জননী আমার
ধাত্রী আমার, আমার দেশ
কেন গো মা তোর শুষ্ক নয়ন?
কেন গো মা তোর রুক্ষ কেশ?
কেন গো মা তোর ধূলায় আসন?
কেন গো মা তোর মলিন বেশ?
.
শত কোটি সন্তান যার
ডাকে উপচে আমার দেশ।
কিসের দুঃখ, কিসের দৈন্য,
কিসের লজ্জা, কিসের ক্লেশ?
শত কোটি মিলিত কন্ঠে
ডাকে যখন আমার দেশ।।
.
উদিল যেখানে বৌদ্ধ আত্মা
মুক্ত করিতে মোক্ষ দ্বার,
আজিও জুড়িয়া অর্ধ জগৎ
ভক্তি প্রণতঃ চরণে যার।
অশোক যাহার কীর্তি ছায়িল
গান্ধার হতে জলধি শেষ
তুই কিনা মা গো তাদের জননী?
তুই কিনা মা গো তাদের দেশ।।

Dijendralal-Roy


ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

ধনধান্য পুষ্পভরা

ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা;
তাহার মাঝে আছে দেশ এক- সকল দেশের সেরা;
সে যে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা;
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে-আমার জন্মভূমি।

চন্দ্র-সূর্য গ্রহ তারা, কোথায় উজল এমন ধারা!
কোথায় এমন খেলে তড়িৎ এমন কালো মেঘে!
ও তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ি পাখির ডাকে জেগে।।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানী সে যে- আমার জন্মভূমি।

এত স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধুম্র পাহাড়;
কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে।
এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানী সে যে- আমার জন্মভূমি।

পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী; কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি
গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে-
তারা ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানী সে যে- আমার জন্মভূমি।

ভায়ের মায়ের এমন স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ?
- ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি,
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি-
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানী সে যে- আমার জন্মভূমি।