প্রলয়োল্লাস
কাজী নজরুল ইসলাম
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
ঐ নতুনের কেতন ওরে কাল- বোশেখীর ঝড়।
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
আসছে এবার অনাগত প্রলয়- নেশার নৃত্য পাগল
সিন্ধুপারের সিংহ- দ্বারে ধমক হেনে ভাংল আগল।
মৃত্যু- গহন অন্ধ-কুপে
মহাকালের চন্ড- রূপে-
ধুম-ধুপে
বজ্র-শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর-
ওরে ঐ হাসছে ভয়ংকর।
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
ঝামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে গগন দুলায়,
সর্বনাশা জ্বালা- মুখী ধুমকেতু তার চামর ঢুলায়।
বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে
রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে
দোদুল দোলে
অট্ট্রোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর-
ওরে ঐ স্তব্ধ চরাচর।
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
দ্বাদশ রবির বহ্নি-জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন- কটায়,
দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঞ্জল তার ত্রস্ত জটায়।
বিন্দু তাহার নয়ন জলে
সপ্ত মহাসিন্ধু দলে
কপোল-তলে।
বিশ্ব-মায়ের আসন তারি বিপুল বাহুর' পর-
হাঁকে ঐ ''জয় প্রলয়ংকর!"
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
মাভৈঃ, মাভৈঃ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে।
জরায় মরা মুমুর্ষদের প্রান-লুকানো ঐ বিনাশে।
এবার মহা নিশার শেষে
আসবে উষা অরুণ হেসে
করুণ বেশে।
দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু চাঁদের কর,
আলো তার ভরবে এবার ঘর!
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
ঐ সে মহাকাল সারথি রক্ত- তড়িৎ চাবুক হানে,
রণিয়ে ওঠে হ্রেষার কাঁদন বজ্র- গানে ঝড় তুফানে।
ক্ষুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায় নীল খিলানে।
গগন-তলের নীল খিলানে।
অন্ধ কারার বন্ধ কুপে
দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যুপে
পাষান- স্তুপে!
এইতো রে তার আসার সময় ঐ রথ- ঘর্ঘর-
শোনা যায় ঐ রথ ঘর্ঘর!
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?- প্রলয় নতুন সৃজন- বেদন।
আসছে নবীন- জীবন- হারা অসুন্দরে করতে ছেদন।
প্রলয় বয়েও আসছে হেসে-
মধুর হেসে।
ভেঙ্গে আবার গড়তে জানে সে চির- সুন্দর।
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
ঐ ভাঙ্গা- গড়া খেলা যে তার কিসের আবার ডর?
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
বধুরা প্রদীপ তুলে ধর!
কাল ভয়ংকরের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর।
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
তোরা সব জয়ধ্বনী কর!
No comments:
Post a Comment